নিউজ ২৪ নারায়ণগঞ্জ:
নিজস্ব সংবাদঃ
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাবেক পলিটব্যুরো সদস্য কিংবদন্তি শ্রমিকনেতা কমরেড শফিউদ্দিন আহমেদ এর ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা নেতৃবৃন্দ।
শুক্রবার (১৫ নভেঃ) সকালে সিদ্ধিরগঞ্জস্থ পাঠানটুলী সিটি কবরস্থানে পার্টির জেলা সভাপতি কমরেড হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে পুষ্পস্তবক অর্পণে অন্যান্যর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পার্টির জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক কমরেড গোলাম মোস্তফা সাচ্ , পার্টির জেলা কমিটির সদস্য কমরেড বাহার উদ্দিন , কমরেড আবুল হোসেন পাঠান, কমরেড সুনীল দত্ত, কমরেড নাসির হোসেন, কমরেড শফিউদ্দিন আহমেদের বড় ছেলে মোঃ রফিক আহমেদ প্রমুখ।
উল্লেখ্য ২০২০ সালের এই দিনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার একটি হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। প্রয়াত শফিউদ্দিন আহমেদ এর শ্রমিক নেতৃত্বের শুরু সাধারণ বীমা কর্মচারীদের নেতৃত্ব দেওয়ার মধ্য দিয়ে। তিনি প্রথমে ওই ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও পরে সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। এর মাধ্যমে যুক্ত হন প্রথমে ‘গণতান্ত্রিক শ্রমিক আন্দোলন’ ও পরে ‘জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশে’। আরেক কিংবদন্তি শ্রমিক নেতা কমরেড আবুল বাশারের মৃত্যু হলে তার ওপর জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সার্বিক দায়িত্ব পড়ে। তিনি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনকে ঐক্যবদ্ধ করেন।
এ ভূমিকায় তিনি শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন। শ্রম আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে স্কপের পক্ষ থেকে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন এবং শ্রমিকদের পক্ষ থেকে গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী আনেন।
শফিউদ্দিন আহমেদের শ্রমিক আন্দোলনের মাঠের কার্যক্ষেত্র ছিল মূলত নারায়ণগঞ্জ। নারায়ণগঞ্জের জুট প্রেস শ্রমিক ইউনিয়ন, আই সি আই (এ সি আই) শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নসহ নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ইউনিয়ন গঠনের ক্ষেত্রে তিনি মুখ্য ভূমিকা রাখেন। এ ক্ষেত্রে তার সবচেয়ে বড় অবদান গার্মেন্ট শ্রমিকদের সংগঠিত করা। নারায়ণগঞ্জের নিট গার্মেন্ট শ্রমিকরা যে মানবেতর অবস্থায় কাজ করতেন, তা থেকে তাদের উদ্ধার করে তিনি গার্মেন্ট শ্রমিকদের বিশেষভাবে সংগঠিত করেন। পরে শ্রমিক আন্দোলনে কেন্দ্রীয় দায়িত্বে সময় দিতে হওয়ায় তিনি সে ক্ষেত্রে আর বিশেষ মনোযোগ দিতে পারেননি। কিংবদন্তি শ্রমিক নেতা আবুল বাশারের মৃত্যুর পর পাটকল শ্রমিক আন্দোলনের দায়িত্বও তার ওপর এসে পড়ে। শ্রমিক নেতা সহিদুল্লাহ চৌধুরী ও হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে পরিচালিত পাটকল শ্রমিক আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে তিনি বিশেষ ভূমিকা রাখেন।
নারায়ণগঞ্জে তার এই শ্রমিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তিনি কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। বাংলাদেশ-পরবর্তী বিভিন্ন কমিউনিস্ট গ্রুপ ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিতে (লেনিনবাদী) সংগঠিত হলে তিনি তার সঙ্গে যুক্ত হয়ে নারায়ণগঞ্জে পার্টি সংগঠিত করার দায়িত্ব নেন এবং সে হিসেবে তিনি দীর্ঘদিন নারায়ণগঞ্জ জেলা পার্টির সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। লেনিনবাদী পার্টি বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি নাম নিয়ে প্রকাশ্য হলে তিনি প্রথমে ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে ও পরে পলিটব্যুরোর সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। এবং সেই দায়িত্বে তিনি দীর্ঘদিন পার্টির অডিট কমিটির প্রধান ছিলেন।
শফিউদ্দিন আহমেদ দীর্ঘদিন ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন। তার সঙ্গে যুক্ত হয় কিডনিসহ অন্যান্য সমস্যা। এর ফলে শেষের দুই বছর তিনি পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারছিলেন না। গত কংগ্রেসে ( নভেম্বর ২০১৯ ইং ) কমরেড শফিউদ্দিন আহমেদকে আজীবন সম্মানিত সদস্য হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। বিপ্লবী এই নেতা যুগ যুগ জিয়ে থাকবে শ্রমজীবী মানুষের অন্তরে।
Leave a Reply