নিউজ ২৪ নারায়ণগঞ্জ:
“নারায়ণগঞ্জ হবে সবুজে ঘেরা, প্রাচ্যের ডান্ডি হবে বিশ্ব সেরা”—এই প্রত্যয়ে শুরু হওয়া ‘গ্রিন অ্যান্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ’ কর্মসূচির আওতায় বুধবার সাইনবোর্ড এলাকায় এক লক্ষতম গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঐতিহাসিক বৃক্ষরোপণের উদ্বোধন করেন। পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন ও নগরায়ণের লক্ষ্যকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জ জেলাকে সবুজ ও টেকসই শহরে রূপান্তরের অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হচ্ছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, গত ১০ মে ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।
গত দুই মাসে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এলাকা ও জেলার পাঁচটি উপজেলার ৩৯টি ইউনিয়ন, ৫টি পৌরসভা, ৪২টি সরকারি দপ্তর, ৩১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ১৮০.৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক এবং ৪ কিলোমিটার খালের পাড়জুড়ে একযোগে বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বৃক্ষরোপণের ক্ষেত্রে স্থানীয় ও বিদেশি মিলিয়ে ৪৮ প্রজাতির গাছ নির্বাচন করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে পাখির আবাসযোগ্যতা, বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য রক্ষা এবং পরিবেশ উপযোগিতা। বিদেশি প্রজাতির মধ্যে রয়েছে চেরি, গোলাপি ট্রাম্পেট, জাকারান্ডা, ফক্সটেল পাম, গ্লোরিয়া সিরিয়া এবং রেইন ট্রি। এর মধ্যে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে সর্বোচ্চ সংখ্যক — ৩,০০০টি দেবদারু গাছ রোপণ করা হয়েছে, যা সড়কটিকে সবুজ ও মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্যে মোড়ানো একটি পরিচ্ছন্ন করিডোরে রূপান্তর করেছে। এছাড়া, হাজিগঞ্জ দুর্গ ও শীতলক্ষ্যা নদীর তীরবর্তী এলাকাসহ বেশ কিছু ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক স্পটকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সবুজায়নের আওতায় আনা হয়েছে।
এই কর্মসূচিকে সফল করতে জেলা প্রশাসকের আহ্বানে এক অনন্য সম্মিলিত অংশগ্রহণ পরিলক্ষিত হয়। জেলার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা এবং সকল শ্রেণি-পেশার নাগরিক স্বতঃস্ফূর্তভাবে যুক্ত হন এই পরিবেশ আন্দোলনে। এটি শুধু একটি বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিই নয়, বরং এটি নারায়ণগঞ্জে এক সামাজিক ও নাগরিক আন্দোলনে রূপ নিয়েছে—যেখানে সবাই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় নিজের দায়িত্ববোধ অনুভব করছেন।
পর্যটনবান্ধব নগরী গড়ে তোলার লক্ষ্যে এলাকাভিত্তিক সৌন্দর্যবর্ধক গাছের সমন্বয় ঘটানো হয়েছে, যা নগরের দৃশ্যমান সৌন্দর্যকে বহুগুণে বাড়িয়ে তুলছে। এই বিশাল কর্মযজ্ঞে জড়িত ছিলেন বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের ১৫৬ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী, ১০০ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী, ৬৬০ জন বাগান শ্রমিক, অগণিত স্বেচ্ছাসেবী এবং অন্তত ২০টি সামাজিক ও পরিবেশ সচেতন সংগঠন।
জেলা প্রশাসক এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “আমরা এমন একটি নারায়ণগঞ্জ গড়তে চাই, যেখানে নাগরিক সুবিধা, পরিবেশ রক্ষা ও ঐতিহ্য একসাথে লালিত হবে। এই কর্মসূচি সেই স্বপ্নের পথচলার সূচনা।”
এই পরিবেশবান্ধব, অংশগ্রহণমূলক এবং টেকসই উন্নয়নভিত্তিক কর্মসূচি নারায়ণগঞ্জ জেলাকে সবুজ ও মানবিক শহর হিসেবে গড়ে তোলার পথে একটি দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ হয়ে থাকবে।
Leave a Reply