নিউজ ২৪ নারায়ণগঞ্জঃ
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী মাসুদুজ্জামান মাসুদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারে ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন দলটির তৃণমূলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা। তাদের অভিযোগ দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই ঈর্ষান্বিত হয়ে দলের কয়েকজন নেতাই নেপথ্যে থেকে এই ধরনের কার্যক্রম বাস্তবে রূপ দিচ্ছেন। মাসুদুজ্জামানের দলীয় মনোনয়ন বাতিল করার অভিলাষ থেকে এই ধরনের অপপ্রচারমূলক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে বলে মনে করেন তারা।
তবে, দলীয় হাইকমাণ্ড ‘ক্লিন ইমেজধারী’ ব্যবসায়ী নেতা, সমাজসেবক, ক্রীড়া ও শিক্ষানুরাগী মাসুদুজ্জামানের বিষয়ে সবসময় অবগত আছেন এবং তার বিগত দিনের ত্যাগী ভূমিকা ও দলের প্রতি আনুগত্য বিবেচনায় যোগ্য হিসেবেই তাকে ধানের শীষের কান্ডারি হিসেবে নির্ধারণ করেছেন বলে দাবি বিএনপির তৃণমূলের।
গত ৩ নভেম্বর রাজধানীর গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের বৈঠক বসে। পরে ওইদিন সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে সারাদেশে ২৩৭ আসনে দল মনোনীত চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন। এরমধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে সাবেক যুবদল নেতা ও নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মাসুদুজ্জামান মাসুদকে বেছে নেয় বিএনপি।
আসনটিতে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু ও ব্যবসায়ী আবু জাফর আহমেদ বাবুল। মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের কেউ কেউ দলের এই সিদ্ধান্তকে মেনে না নিয়ে দলের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এক্ষেত্রে সাখাওয়াত হোসেন খানকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজ দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে নানা বিতর্কিত তথ্য প্রচার করতে দেখা গেছে। অন্যরাও নেপথ্যে বিভিন্নজনের মাধ্যমে ফেসবুকে পুরোনো বিভিন্ন ছবি ও তথ্য শেয়ার করে দলীয় প্রার্থীকে বিতর্কিত করার চেষ্টায় রয়েছে। যা বিএনপিকে নারায়ণগঞ্জে দুর্বল করছে বলে জানান তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। সাধারণ জনগণের কাছেও দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে।
এদিকে, ধানের শীষের প্রার্থীর বিরুদ্ধে এসব অপপ্রচার চললেও থেমে নেই বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। তারা সদর ও বন্দরের নির্বাচনী এলাকাগুলোতে ছুটে বেড়াচ্ছেন। দলীয় প্রার্থী মাসুদুজ্জামানের পক্ষে সাধারণ মানুষের কাছে ভোট প্রার্থনা করছেন। পৌঁছে দিচ্ছেন দলের ৩১ দফা কার্যক্রমের লিফলেটও। একইসঙ্গে দল ও দলের বিরুদ্ধে অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে কণ্ঠ সোচ্চার রেখেছেন তারা।
তারা বলছেন, মাসুদুজ্জামানকে যোগ্য বিবেচনা করেই বিএনপি মনোনয়ন দিয়েছে। কেননা, মনোনয়ন প্রক্রিয়াটি মাঠপর্যায়ের জরিপ ও বিগত সময়ে দলের প্রতি ভূমিকার বিষয়গুলো বিবেচিত হয়েছে। দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অপপ্রচারে অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়ে দলের হাইকমাণ্ডকে অমান্য করা হয়। এই ধরনের অপপ্রচার থেকে বিরত থেকে ধানের শীষের জোয়ার তৈরিতে সহযোগী হওয়ার আহ্বান জানান তারা।
গত রোববার খানপুরে এক সভায় মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আব্দুস সবুর খান সেন্টু বলেন, “আজকে তথাকথিত একটি শ্রেণি অপপ্রচারে লিপ্ত। তাদের একটিই খায়েশ। তারা প্রচার করতেছে এইটা চূড়ান্ত (মনোনয়ন) লিস্ট না, এইটা নাকি প্রাথমিক লিস্ট। এই প্রচার করে লাভ হবে না। আপনারা জানেন, দলীয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তাকে বিএনপিতে যোগদান করানোর আগে এই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে অনেক যাচাই-বাছাই করে তারপর যোগদানের নির্দেশ দিয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের নির্বাচনী এলাকা নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১১ থেকে ২৭ নম্বর ওয়ার্ড এবং বন্দর উপজেলা। আমাদের লড়াই হবে যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বকে অতীতে অস্বীকার করেছে সেই গোষ্ঠীর সাথে। মাসুদুজ্জামান মাসুদ আমাদের ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি, ক্রীড়াঙ্গণের প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক পোশাক শিল্পের প্রতিনিধি। বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মাসুদুজ্জামান মাসুদকে নিয়ে আজকে আধুনিক বাংলাদেশ নির্মাণের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।”
মাসুদুজ্জামানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে মন্তব্য করে মহানগর যুবদল আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম সজল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, “নারায়ণগঞ্জ-৫ সংসদীয় আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মাসুদুজ্জামান মাসুদ ভাইয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এটা দলের নেতাকর্মীদের জন্য মঙ্গলজনক নয়। সবশেষে দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”
মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব শাহেদ আহমেদ বলেন, “ধানের শীষের প্রার্থীদের নিয়া নোংরা ষড়যন্ত্র কোনোভাবেই কাম্য না এবং মেনে নেয়া হবে না। ইনশাআল্লাহ। অপপ্রচার আর নোংরামো করে দলের ক্ষতি করছেন এবং দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন।”
শনিবার মাসুদুজ্জামনের পক্ষে এক গণসংযোগে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন আনু বলেন, “প্রাচ্যের ডান্ডি নারায়ণগঞ্জে মাসুদুজ্জামান মাসুদ ভাইয়ের নেতৃত্বে সকলের সম্মিলিতভাবে আগামীতে একটি সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন নারায়ণগঞ্জ গড়তে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। ইতোমধ্যেই অনেকেই বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন, আসলে মাসুদ ভাই ও তার পরিবার একটি বিএনপি পরিবার। এবং তারা জাতীয়তাবাদী দলের দর্শনে বিশ্বাস ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শ এবং নীতি অনুসরণ করে। এবং মাসুদুজ্জামান মাসুদ ভাই তিনি নিজের সম্মত দিয়ে বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করছেন।”
তিনি বলেন, “আমরা দেখতে পাচ্ছি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যাদেরকে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গুপ্ত স্বৈরাচার হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সেই গুপ্ত স্বৈরাচাররা নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য দেশে ও বিদেশে ষড়যন্ত্র করছে। সেই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে মাসুদ ভাইয়ের পক্ষে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে কাজ করছি।”
তিনি আরও বলেন, “ইতোমধ্যে আমাদের দলের কিছু নেতৃবৃন্দ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমরা বলবো দলের সিদ্ধান্তের বাহিরে যে কোনো বিষয় কথা বলতে হলে দলের ফোরামে বলবেন। কিন্তু আপনারা জনগণের মধ্যে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করবেন না। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ধানের শীষের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে বলেছেন। এবং আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে ধানের শীষকে জয়ের মাধ্যমে গুপ্র স্বৈরাচারকে নিশ্চিহ্ন করার যে পরিকল্পনা, সেটি বাস্তবায়ন করব ইনশাআল্লাহ।”
Leave a Reply