নিউজ ২৪ নারায়ণগঞ্জ:
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে একটি কারখানার পোশাক শ্রমিকদের সঙ্গে যৌথবাহিনীর সংঘর্ষে অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। বুধবার দুপুর ১২টা থেকে প্রায় ৩ ঘণ্টাব্যাপী ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আউখাবো এলাকায় এ সংঘর্ষ চলে।
আহতদের মধ্যে উপজেলার ভুলতা এলাকার রবিনটেক্স লিমিটেডের শ্রমিক ছাড়াও পুলিশ ও সেনাসদস্যরা আছেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মেহেদী ইসলাম জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। তবে তাদের পরিচয় জানা যায়নি।
পুলিশ ও কারখানার শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঈদের আগে রবিনটেক্স কারখানার কয়েকজন শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়। প্রতিবাদে চাকরিচ্যুত শ্রমিকরা বুধবার সকালে কারখানার সামনে জড়ো হন। এর আগের দুইদিনও তারা কারখানার সামনে বিক্ষোভ করেন। বুধবার কারখানার অন্যান্য শ্রমিকরাও তাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে কর্মবিরতি দিয়ে কারখানার ভেতরেই অবস্থান করেন। পরে বিক্ষুব্দ শ্রমিকরা কারখানা থেকে বেরিয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে ব্যস্ততম মহাসড়কটিতে যানজট দেখা দিলে তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এক পর্যায়ে শ্রমিকদের সঙ্গে যৌথ বাহিনীর সদস্যদের সংঘর্ষ শুরু হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রবিনটেক্স কারখানার দু’জন শ্রমিক বলেন, মালিকপক্ষ বিনা নোটিশে তাদের শতাধিক শ্রমিককে ছাঁটাই করেছে। গত মার্চ মাসের বেতন-বোনাসও তাদের আংশিক পরিশোধ করা হয়েছে।
“আমরা আমাদের ন্যায্য দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে কারখানার ভেতরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলাম। বিনা উস্কানিতে পুলিশ ও সেনা বাহিনী আমাদের উপর লাঠিচার্জ করে”, বলেন শ্রমিকরা।
কারখানাটির অন্তত ৩৫ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন বলেও দাবি করেন তারা। আহতরা স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
যদিও কারখানাটির জেনারেল ম্যানেজার (এডমিন) আদনান শামসের দাবি, শ্রম আইনের ২৬ ধারা অনুযায়ী ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে।
মুঠোফোনে তিনি বলেন, “সকালে শ্রমিকরা অযৌক্তিক কারণে প্রোডাকশন বন্ধ করে দিয়ে কারখানা ভাঙচুর, কর্মকর্তাদের মারধর করেন। কেননা আইন মেনেই কয়েকজন শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছিল। কারখানার ভেতরে ভাঙচুর-লুটপাটের পর বাইরে গিয়ে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে জড়ায়। বহিরাগত লোকজনও এই ঘটনার সাথে জড়িত আছে।”
এদিকে, সংঘর্ষের ঘটনায় সেনাবাহিনীর একজন লেফটেন্যান্ট, শিল্প পুলিশের একজন সহকারী পুলিশ সুপারসহ অন্তত ১৫ জন সেনা ও পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা মেহেদী ইসলাম।
তিনি বলেন, “ছাঁটাইসহ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে দুপুরে শ্রমিকরা মহসড়ক অবরোধ করলে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য জেলা পুলিশ, শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করলে ক্ষুব্দ হয়ে ওঠেন শ্রমিকরা এবং ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে আমরা লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।”
বিক্ষুব্দরা এ পুলিশ কর্মকর্তার সরকারি গাড়িটিও ভাঙচুর করেছেন বলেও জানান তিনি।
এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান মেহেদী ইসলাম।
Leave a Reply