নিউজ ২৪ নারায়ণগঞ্জঃ
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে শুক্রবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার ও মিলনায়তনে সেমিনারের আয়োজন করেছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট। সংগঠনের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে সঞ্চালনা করেন ধীমান সাহা জুয়েল। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লেখক, সমাজচিন্তক ও সংস্কৃতিজন রফিউর রাব্বি।
প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে রফিউর রাব্বি বলেন, জুলাই আন্দোলনটি শুরু হয়েছিল কোটা সংস্কারের দাবিতে, তবে খুব অল্প সময়েই এটি রাজনৈতিক রূপ ধারণ করে। ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, শ্রেণি নির্বিশেষে এ আন্দোলনে যুক্ত হয় সাধারণ মানুষ। হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ, সমতল-পাহাড়ি, রিকশাচালক, ফেরিওয়ালা, শ্রমিক, শিক্ষার্থী, মাদ্রাসার ছাত্র—সবাই রাজপথে ছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে।
তিনি আরও বলেন, ৩৬ জুলাইয়ের মতো একটি দীর্ঘ, ঐতিহাসিক সময় পেরিয়ে এ অভ্যুত্থান ঘটে। কিন্তু ৫ আগস্টের পরিবর্তনের পর রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে অভ্যুত্থানের ‘মালিকানা’ নিয়ে টানাটানি শুরু হয়। যেমনটি ঘটেছিল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে ঘিরে। কিন্তু যদি আমরা অভ্যুত্থানের শহীদদের পরিসংখ্যান দেখি, তাহলেই শ্রেণিভিত্তিক চরিত্রটি উপলব্ধি করতে পারি।
রফিউর রাব্বি অভিযোগ করে বলেন, বর্তমানে জাতীয়তাবাদী শূন্যতার সুযোগে ধর্মীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলো সমাজে ফ্যাসিবাদের জায়গা নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তারা ‘মব জাস্টিস’-এর মাধ্যমে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। সংখ্যালঘু, সুফি, বাউল, আহমদিয়া সম্প্রদায়, মাজার, মন্দির, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান—সবকিছুই তাদের হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে। নারীদের ওপর হেনস্তা, অপমান এবং হেফাজতের কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য সামাজিক পরিবেশকে অস্থির করে তুলেছে। অথচ অন্তর্বর্তী সরকার শুধু আশ্বাস দিয়েই থেমে আছে, কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
তিনি বলেন, এই আন্দোলনের মূল আকাঙ্ক্ষা ছিল বৈষম্যহীন বাংলাদেশ। কিন্তু ৫ আগস্টের পর সাধারণ মানুষ যে আশায় রাজপথে নেমেছিল, তারা এখন আশাহত। শ্রমিকরা দমন-পীড়নের শিকার হয়েছে, গুলিবিদ্ধ হয়েছে, একজন গার্মেন্টস শ্রমিক নিহত হয়েছেন—এটাই চব্বিশের অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের বাস্তবতা।
সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন রথীন চক্রবর্তী, ভবানী শংকর রায়, জাহিদুল হক দীপু, অমল আকাশ, রহমান সিদ্দিক, জাকির হোসেন, দুলাল সাহা, দিনা তাজরীন প্রমুখ।
Leave a Reply