নিউজ ২৪ নারায়ণগঞ্জ:
এস এম জহিরুল ইসলাম বিদ্যুৎ
বাঙালির সর্ববৃহৎ উৎসব পহেলা বৈশাখ এবার আসছে ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে। চব্বিশের গণজাগরণ, পরিবর্তনের আকাঙ্খা আর স্বৈরতন্ত্রবিরোধী চেতনাকে ধারণ করে ১৪৩২ বঙ্গাব্দকে বরণ করে নিতে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জবাসী। এবারের বৈশাখের মূল প্রতিপাদ্য ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’।
জেলা প্রশাসক মোঃ জাহিদুল ইসলাম মিয়া বলেন
আমাদের চেষ্টা থাকবে বাংলার হারিয়ে যাওয়া লোকজ শিল্পগুলোকে সামনে আনার। এবার আমরা সেই পুরনো অনুষঙ্গগুলো হুবহু তুলে ধরার চেষ্টা করছি, যাতে নতুন প্রজন্ম তাদের সঙ্গে পরিচিত হতে পারে। এটি আমাদের সাংস্কৃতিক দায়বদ্ধতার অংশ।
এবার ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র পরিবর্তে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ নাম ব্যবহার হচ্ছে জানিয়ে বলেন, “সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ‘মঙ্গল’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়েছে। তাই এবার ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ নামে উদযাপন হবে বৈশাখ।নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোঃ জাহিদুল ইসলাম মিয়ার নির্দেশে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন বর্ষবরণে নানা আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আলমগীর হুসাইন বলেন, সকাল নয়টায় চাষাঢ়া থেকে শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর দিনব্যাপী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে লোকজ পরিবেশনা চলবে।জেলা প্রশাসক কার্যালয় প্রাঙ্গণে করা হয়েছে ছোট পরিসরে বৈশাখী মেলার আয়োজন। যেখানে লোকজ ঐতিহ্যের হাতি, ঘোড়া, পালকি, ঢেকিসহ বিভিন্ন প্রদর্শনী থাকবে। এছাড়া, পান্তার আয়োজনও রয়েছে।
বর্ষবরণের এ আয়োজনে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে অংশ নিবেন এবং বিভিন্ন লোকজ খেলার আয়োজনও রয়েছে বলে জানান প্রশাসনিক এ কর্মকর্তা।
বৈশাখ উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ শহরজুড়ে শুরু হয়েছে বাংলা বর্ষবরণের প্রস্তুতি। নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউট হয়ে উঠেছে বাঙালিয়ানার রঙে রাঙানো এক সৃজনশীল আখড়া। বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানাতে চারুকলার শিক্ষার্থীরা লোকজ অনুষঙ্গ নিয়ে শিল্পসামগ্রী তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
এবার চারুকলা ইনস্টিউট বর্ষবরণের শোভাযাত্রাটি চারুকলার সামনে থেকে সকাল নয়টায় বের হবে। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান সড়ক ঘুরে আবার চারুকলায় এসে শেষ হবে।
প্রতিবছরের মতো এবারো লোকজ ঐতিহ্য ও আবহমান বাংলার চিত্র শোভাযাত্রায় তুলে ধরতে তৈরি হচ্ছে ষাড়, ঘোড়া, টমটমের মোটিফ। এছাড়া, হাতি, ঘোড়ার মুখোশ ও মাটির সরায় গ্রামীণ চিত্রসহ নানান অনুষঙ্গ তৈরিতে ব্যস্ত চারুকলার শিক্ষার্থীরা।
নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউট ঘুরে দেখা গেছে, ভবনজুড়ে রঙ-তুলির ঝলক আর কাঠ-বাঁশের ঠকঠক শব্দ। বৈশাখকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস ও সৃজনশীলতায় ভরপুর পুরো ক্যাম্পাস। উপলক্ষে সূর্যোদয়ের সাথে প্রভাতী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট। পরে জোটের কর্মীরা শোভাযাত্রায় অংশ নেবেন। এছাড়া, বিকেল তিনটায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শুরু হবে বৈশাখী অনুষ্ঠান।
নববর্ষের একদিন আগে চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষেও রয়েছে নানা আয়োজন। নাট্য সংগঠন উঠান থিয়েটার শহরে ‘চৈত্রসংক্রান্তি ও আলোর ভাসান’র আয়োজন করেছে। বিকেলে শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে ৫ নম্বর খেয়াঘাটে এ অনুষ্ঠানে মাঝি সম্মাননা, আলোর ভাসান, শিশুদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, সঙ্গীত, নৃত্য, কবিতা আবৃত্তি, পারফর্মিং আর্ট প্রদর্শনী চলবে।
এদিকে, শহরের বিভিন্ন জায়গায় বৈশাখ উপলক্ষে চলছে নানা প্রস্তুতি। দোকানপাটে চলছে বৈশাখী পণ্য ও পোশাকের বিক্রি, রেস্তোরাঁগুলোতেও থাকছে পান্তা-ইলিশের বিশেষ আয়োজন। তবে এ বছর রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে অনেকেই নববর্ষকে দেখছেন নতুন আশার প্রতীক হিসেবে।
শুধু আনন্দ নয়, এবারের বৈশাখ বরণ যেন হয়ে উঠছে একটি প্রতিরোধের ভাষা, একটি সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ।
বাঙালির প্রাণের উৎসব এবার বলছে—ঐক্য গড়ে তুলো, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াও।
Leave a Reply