করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এটি একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। এতে ভাইরাসটিতে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৬১০ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন এক হাজার ৭৬৪ জন। এতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছে ৪৪ হাজার ৬০৮।
শনিবার (৩০ মে) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস বিষয়ক নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়। বুলেটিন পড়েন অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (মহাপরিচালকের দায়িত্বপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
তিনি নতুন যুক্ত একটিসহ মোট ৫০টি আরটি-পিসিআর ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষার তথ্য তুলে ধরে জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় নয় হাজার ৯৮৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো দুই লাখ ৯৭ হাজার ৫৪টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় করোনার উপস্থিতি পাওয়া গেছে আরও এক হাজার ৭৬৪ জনের দেহে। ফলে দেশে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৪৪ হাজার ৬০৮ জন। আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে আরও ২৮ জনের। ফলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৬১০ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও ৩৬০ জন। এ নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল নয় হাজার ৩৭৫ জনে।
নতুন করে যারা মারা গেছেন, তাদের ২৫ জন পুরুষ, তিনজন নারী। বয়সের দিক থেকে ত্রিশোর্ধ্ব চারজন, চল্লিশোর্ধ্ব চারজন, পঞ্চাশোর্ধ্ব নয়জন, ষাটোর্ধ্ব ছয়জন, সত্তরোর্ধ্ব তিনজন এবং ৮১ থেকে ৯০ বছর বয়সী দুজন মারা গেছেন। ২৬ মারা গেছেন হাসপাতালে, দুজনের মৃত্যু হয়েছে বাসায়। এদের ১৮ জন ঢাকা বিভাগের, সাতজন চট্টগ্রাম বিভাগের, দুজন রংপুর বিভাগের এবং একজন সিলেটে বিভাগের। এলাকাভেদে ঢাকা শহরে ১০ জন, ঢাকা জেলায় একজন, নারায়ণগঞ্জে একজন, মুন্সিগঞ্জে একজন, গাজীপুরে একজন, ফরিদপুরে দুজন, নরসিংদীতে দুজন, চট্টগ্রাম জেলায় একজন, চট্টগ্রাম শহরে দুজন, কক্সবাজারে দুজন, কুমিল্লায় দুজন, পঞ্চগড়ে একজন, রংপুরে একজন এবং সিলেটে একজন মারা গেছেন।
গত শুক্রবারের (২৯ মে) বুলেটিনে জানানো হয়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৩ জন মারা গেছেন। ১১ হাজার ৩০১টি নমুনা পরীক্ষায় করোনার উপস্থিতি পাওয়া গেছে আরও দুই হাজার ৫২৩ জনের দেহে, যা একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। সে হিসাবে আগের ২৪ ঘণ্টার তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা কমলেও বেড়েছে মৃত্যু। এটি যৌথভাবে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। এর আগে আরও একদিন ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সে তথ্য জানানো হয় গত ২৪ মে’র বুলেটিনে।
শনিবারের বুলেটিনে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ১৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এখন পর্যন্ত শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ২১ দশমিক ২ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে আরও ৪৬৯ জনকে এবং বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছেন পাঁচ হাজার ৫২৯জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৮০ জন এবং এ পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন দুই হাজার ৮৯০ জন।
সারাদেশে আইসোলেশন শয্যা আছে ১৩ হাজার ২৮৪টি। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় সাত হাজার ২৫০টি এবং ঢাকার বাইরে আছে ছয় হাজার ৩০০টি। সারাদেশে আইসিইউ শয্যা আছে ৩৯৯টি এবং ডায়ালাইসিস ইউনিট আছে ১১২টি।
গত ২৪ ঘণ্টায় হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে দুই হাজার ২২০ জনকে। এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে দুই লাখ ৮২ হাজার ২২৫ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড় পেয়েছেন দুই হাজার ২১৯ জন। এ পর্যন্ত মোট ছাড় পেয়েছেন দুই লাখ ২১ হাজার ৯৪৯ জন। বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৬০ হাজার ২৭৬ জন।
দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য ৬২৯টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সেবা দেয়া যাবে ৩১ হাজার ৯৯১ জনকে।
বরাবরের মতোই বুলেটিনে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।
চীনের উহান শহর থেকে গত ডিসেম্বরে ছড়ানো করোনাভাইরাসের প্রকোপে গোটা বিশ্ব মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৬০ লাখে দাঁড়িয়েছে। মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে তিন লাখ ৬৪ হাজার। তবে সোয়া ২৬ লাখের মতো রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ।
Leave a Reply