রবিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,
শিরোনামঃ
এবার নারায়ণগঞ্জে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার তালিকায় আসতে পারে এটিএম কামালের নাম বিএনপির দুঃসময়ে আমি নেতাকর্মীর পাশে ছিলাম: মান্নান এবারও আপত্তির মুখে সংক্ষিপ্ত করা হলো লালন সাধুসঙ্গের আয়োজন বন্দরে বসুন্ধরা সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে বয়লার বিস্ফোরণে ৬ জন দগ্ধ  সিদ্ধিরগঞ্জের ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলো পরিদর্শনে জেলা প্রশাসক  লুন্ঠিত অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধারে তথ্য প্রদানকারী ব্যক্তিকে পুরস্কৃত করা হবে: পুলিশ সুপার  মাসুদুজ্জামানের উদ্যেগে ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ মহানগর শ্রমিক দলের আহবায়ক এস এম আসলাম’কে সমাজ কল্যাণ ক্লাবের সংবর্ধনা ভূমিকম্পের পর বন্দরে একটি তুলার কারখানায় ভয়াবহ আগুন  তারেক রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে সিদ্ধিরগঞ্জে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল

এবারও আপত্তির মুখে সংক্ষিপ্ত করা হলো লালন সাধুসঙ্গের আয়োজন

নিউজ ২৪ নারায়ণগঞ্জঃ 

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার মধ্য নরসিংহপুর গ্রামে স্থানীয় একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর আপত্তির মুখে এ বছরও সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে “লালন সাধুসঙ্গ”-এর আয়োজন।

শনিবার (২২ নভেম্বর) সন্ধ্যা ছয়টার দিকে কাশীপুর ইউপির এ গ্রামটিতে অবস্থিত মুক্তিধাম আশ্রমে দুʼদিন ব্যাপী সাধুসঙ্গের উদ্বোধন করেন নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা রফিউর রাব্বি।

গতবছর “তৌহিদি জনতার” ব্যানারে একই ধর্মীয় গোষ্ঠীর হুমকি ও বাধার মুখে এ আয়োজন বন্ধ করে দেয় জেলা প্রশাসন। সারাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা লালন ভক্তরা ওই বছর ফিরে যেতে বাধ্য হন।

মুক্তিধাম আশ্রম ও লালন একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা ফকির শাহজালাল বলেন, গতবছর বাধা পেয়ে এবার আগেভাগেই তিনি জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপার বরাবর চিঠি দিয়ে অবহিত করেন।

পরে গত ২০ নভেম্বর উচ্চস্বরে মাইক না বাজানো, মহিলা-পুরুষের আলাদা বসানো, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত আনে— এমন বক্তব্য পরিহার করে মিলাদ-জিকিরের মাধ্যমে আয়োজন শেষ করাসহ ১৩ শর্তে অনুমতি দেওয়া যেতে পারে জানিয়ে জেলা প্রশাসককে চিঠি দেন জেলা পুলিশ সুপার।

“কিন্তু শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের পর তৌহিদি জনতা নাম দিয়ে স্থানীয় শতাধিক মুসুল্লি বিক্ষোভ করেন। তারা আমাদের আয়োজন গতবারের মতো বন্ধ রাখার দাবি জানান। পরে পুলিশ-প্রশাসন এসে তাদের নিভৃত করে”, বলেন শাহজালাল।

পরে পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে আয়োজন সংক্ষিপ্ত করার নির্দেশনাও দেওয়া হয় বলে জানান তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুক্রবার জুমার নামাজের পর গ্রামটির একটি স্কুলমাঠে জড়ো হন শতাধিক মুসুল্লি। এতে স্থানীয় মুসুল্লিরা ছাড়াও হেফাজতে ইসলাম, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীরাও অংশ নেন।

তাদের নেতৃত্ব দেন হেফাজতে ইসলামের জেলা কমিটির সহসভাপতি ও ইমাম ঐক্য পরিষদ কাশীপুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মুফতি আব্দুল হান্নান।

যোগাযোগ করা হলে মুঠোফোনে তিনি বলেন, “লালন সাধুসঙ্গের আড়ালে তারা অসামাজিক কার্যকলাপ চালায়। এই ধরনের গান-বাজনার আয়োজন ইসলামের দৃষ্টিকোন থেকেও ঠিক না, তাছাড়া এলাকাবাসীও চান না। এ লালন সাধুসঙ্গ বন্ধ করতে আমরা জেলা প্রশাসকের সঙ্গেও বসেছিলাম, তারা এ আয়োজন বন্ধের আশ্বাস দিয়েছিল, কিন্তু এখন শুনছি কিছুই বন্ধ হয়নি।”

আয়োজন বন্ধ না করায় প্রশাসনের প্রতিও ক্ষোভ প্রকাশ করে এ হেফাজত নেতা বলেন, “প্রশাসনে যারা আছে তারা কোন যুক্তিতে এটা করতে দিতেছি জানি না। কিন্তু এটা আমরা অবশ্যই বন্ধ করবো। এটা নিয়ে বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে দায়ি থাকবে প্রশাসন।”

স্থানীয় ধর্মীয় একটি গোষ্ঠীর  হুমকিতে আতঙ্কিত বলে জানান আয়োজকরা। শাহজালাল বলেন, “গতবছরও আয়োজন বাতিল করতে হয়। এবারো আমাকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে, প্রশাসনও আয়োজন ছোট করতে বলেছে। সব নিয়ে আতঙ্কে আছি।”

শনিবার দুপুর থেকে সাধুসঙ্গের এ আয়োজনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লালনভক্তরা আসতে শুরু করেন। বিকেল চারটায় আয়োজন শুরু করার কথা থাকলেও জেলা প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে আয়োজনে বাধা দেওয়া হয়। পরে গানের শব্দ প্রাঙ্গণের বাইরে না যেন না যায়, এমন শর্তে মৌখিক অনুমতি দেন।

এ সময় ফতুল্লা সার্কেলের এসিল্যান্ড ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান নূর এবং ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন। তবে, গণমাধ্যমে কোনো বক্তব্য দিতে তারা অস্বীকৃতি জানান।

পরে যোগাযোগ করা হলে মুঠোফোনে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাছলিমা শিরিন বলেন, “লালন সাধুসঙ্গের এ আয়োজনে প্রশাসনের কোনো অনুমতি নেই। তারপরও যেহেতু তারা আয়োজন করে ফেলেছেন সেজন্য স্বল্প পরিসরে করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু উচ্চস্বরে কোনো গান-বাজনা বা মেলা হবে না।”

আয়োজনের উদ্বোধক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি বলেন, “এ বছর আয়োজনটি ছিল আরও বড় পরিসরে এবং ব্যাপকভাবে। গতবছর এ আয়োজনটি ঘোষণা করেও তৌহিদি জনতার বাধার কারণে আয়োজনটি করতে পারেনি। এবারও যখন তারা আয়োজনটি করতে যাচ্ছে তখন ওই গোষ্ঠীটিই অনৈসলামিক, ইসলামীবিরোধী কার্যকলাপের কথা বলে এর বিরুদ্ধে নেমেছে। ফলে আয়োজনটি যে কলেবরে বা যে পরিসরে ছিল সেটি ছোট করতে করতে যে অবস্থায় এসেছে সেটি না করার মতোই।”

প্রশাসনের ভূমিকায় নাখোশ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, “প্রশাসন বলছে আমরা এর নিরাপত্তার জন্য আছি কিন্তু এটি দ্বৈত ভূমিকা, এটির নিন্দা জানাই। একদিকে ৬৪ জেলায় তারা লালনের উৎসবের আয়োজন করছে সরকার আর অন্যদিকে লালনের অনুসারী বাউল-সন্যাসীদের বিরুদ্ধে থাকা গোষ্ঠীর সঙ্গে আপোস করছে। শক্ত কোনো অবস্থানে না যাবার কারণে ওই তথাকথিত গোষ্ঠীর কাছে প্রশাসন জিম্মি হয়ে পড়েছে।”

প্রশাসনের এ ধরনের ভূমিকা থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “লালনের অনুসারী সাধুরা নির্বিবাদী ও অহিংস মানুষ। তারা সহিংস গোষ্ঠীর সাথে বিবাদে জড়ান না। এর সুবিধা প্রশাসন যেমন নেয়, তেমনি ওই সহিংস গোষ্ঠীটিও নিচ্ছে। এটি আমাদের সংস্কৃতির উপর যেমন আঘাত, তেমনি গণতন্ত্র বা চব্বিশের চিন্তা-চেতনা ধূলিসাৎ করে দিবে, যদি এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা না যায়।”

লালনের এ সাধুসঙ্গের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি দিনা তাজরিন, সাবেক সভাপতি জিয়াউল কাজল, ভবানী শংকর রায়, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েলও উপস্থিত ছিলেন।

বক্তব্যে তারাও এ আয়োজন সংক্ষিপ্ত করতে বাধ্য হবার বিষয়টি তুলে ধরেন এবং প্রতিবাদ জানান।

তবে, দুপুর থেকেই আশ্রমের ভেতরে ও বাইরে ব়্যাব ও পুলিশ সদস্যদের নিরাপত্তার জন্য অবস্থানে দেখা গেছে।

খবরটি সবার সাথে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ বিভাগের আরও খবর...।