নিউজ ২৪ নারায়ণগঞ্জঃ
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় নিহত হাফেজ সোলাইমানের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে উত্তোলন করতে দেয়নি পরিবার ও স্বজনরা।
সোমবার ৯ ডিসেম্বর দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত-৮ এর আদেশের প্রেক্ষিতে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তামশিদ ইরাম খান উপস্থিত হয়ে মরদেহ উত্তোলন করতে চাইলে মামলার বাদী শামীম কবির অপারগতা প্রকাশ করেন। সিদ্ধিরগঞ্জের মাদানীনগর মাদ্রাসা সংলগ্ন কবরস্থান থেকে সোলাইমানের মরদেহ উত্তোলনের কথা ছিল।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তামশিদ ইরাম খান জানান, আদালতের আদেশে আমরা মরদেহ উত্তোলন করতে চাইলে মামলার বাদী শামীম কবির আমাদের কাছে সময় প্রার্থনা করে। তারা আদালতে গিয়ে বিষয়টি আলোচনা করে সমাধান করতে চান। মরদেহ কোন ভাবেই উত্তোলন করতে না চাওয়ায় আমরা মরদেহ উত্তোলন না করেই চলে আসি। আমরা আদালতে গিয়ে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিবো। পরবর্তীতে আদালত আমাদের যেই নির্দেশনা দিবেন আমরা সেই মোতাবেক কাজ করবো।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক মোসাম্মদ হাসিনা বেগম বলেন, লাশের ময়নাতদন্তের জন্য আদালতের নির্দেশে আজকে মরদেহটি উত্তোলনের কথা ছিলো। কিন্তু মামলার বাদি শামীম কবির ও নিহতের পরিবার না চাওয়ায় মরদেহ উত্তোলন করা সম্ভব হয়নি। তারা আদালতের মাধ্যমে যেভাবে চাইবে পরবর্তীতে সেইভাবে কাজ করবো। তবে এই মামলায় এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার নেই।
মামলার বাদি শামীম কবির বলেন, আমরা পুলিশকে আগেই জানিয়েছি যদি মরদেহ উত্তোলন ছাড়া কিছু হয় তাহলে আমরা রাজি আছি। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে মরদেহ উত্তোলন ছাড়া সম্ভব না। নিহতের বাবা-মা অর্থাৎ আমার শশুর-শাশুড়ি কোনভাবেই মরদেহ উত্তোলনের পক্ষে না।
তিনি আরও বলেন, আদালতের মাধ্যমে মামলার তদন্তের প্রক্রিয়া যে এতদূর এগিয়ে এসেছে এটা আমাদের অজান্তে ছিলো। এজন্য আমরা খবর পেয়ে দ্রুত এখানে এসে ম্যাজিস্ট্রেটকে অনুরোধ করি মরদেহ যেন উত্তোলন না করা হয়। ম্যাজিস্ট্রেট আমাকে বললো আদালতের মাধ্যমে এটা সমাধানের জন্য। আমরা আদালতে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নিবো। যেনো মরদেহ উত্তোলন না করে মামলা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। তবে যদি এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে মরদেহ উত্তোলন করতে হবে তাহলে আমরা মামলা তুলে নিবো।
নারায়ণগঞ্জ জেলা জমিয়াতে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশে’র সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান বলেন, হাফেজ সুলাইমান যখন মারা যায় তখন মরদেহটির ময়না তদন্ত করা হয়নি। এজন্য তদন্তের স্বার্থে মরদেহটি শনাক্ত ও ময়না তদন্তের জন্য ম্যাজিস্ট্রেট এখানে এসেছিলো। তবে তার পরিবার মরদেহ উত্তোলন করতে চায় না। এজন্য আমি জেলা প্রশাসক সাহেবের সাথে কথা বলে সময় চেয়েছি।
তিনি আরও বলেন, হাফেজ সোলাইমান কোন রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত ছিলো না। তবে সে হেফাজতের একজন একনিষ্ঠ কর্মী ছিলো। আন্দোলন সংগ্রাম যেখানেই হতো হাফেজ সোলাইমান দৌড়ে রাজপথে চলে আসতো।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ৫ আগস্ট দুপুর দেড়টায় সিদ্ধিরগঞ্জ চিটাগাংরোডস্থ ডাচ বাংলা ব্যাংকের সামনে দুষ্কৃতিকারীদের ছোড়া গুলিতে সোলাইমানের ডানপাশের রানে গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে। পরে অজ্ঞাতনামা পথচারীদের সহায়তায় তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথিমধ্যে তার মৃত্যু হয়। পরে লাশ মাদানীনগর সংলগ্ন করবস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় গত ২২ আগস্ট নিহত সোলাইমানের ভগ্নিপতি শামীম কবির বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক মন্ত্রী দিপু মনি, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, সাবেক এমপি শামীম ওসমানসহ ৫১ জনকে আসামি করা হয়।
Leave a Reply