নিউজ ২৪ নারায়ণগঞ্জঃ
নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি তোলারাম কলেজে এক অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েছেন নিট পোশাক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। এ সময় তাকে ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর’ উল্লেখ করে স্লোগানও দেন শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করতে বাধ্য হন ওই ব্যবসায়ী নেতা।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে পৌনে একটার কলেজ মিলনায়তনে ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট অ্যান্ড বিজনেসম্যান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের (আইবিডব্লিউএফ) এক উদ্যোক্তা সম্মেলন চলাকালীন এ ঘটনা ঘটে। পরে শিক্ষার্থীরা একটি মিছিলও বের করেন ক্যাম্পাসে।
সরকারি তোলারাম কলেজ শাখা ছাত্রদলের সভাপতি মনির হোসেন জিয়ার নেতৃত্বে হাতেমের বিরুদ্ধে এ মিছিলে আরও উপস্থিত ছিলেন কলেজ শাখা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আশিকুজ্জামান অনু, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ইমাম হোসেন, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক তোফায়েল আহমেদ, শিক্ষার্থী তুহিন আহমেদ, সজিব দাস, অলক কান্তি দাস প্রমুখ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমকে ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর’ উল্লেখ করে স্লোগান দিতে থাকেন। কিছুক্ষণ পর হাতেম অনুষ্ঠানস্থল থেকে উঠে চলে যান।
আইবিডব্লিউএফ সাউথ জোনের সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারোয়ার সাঈদ বলেন, স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের নিয়ে উদ্যোক্তা সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে তোলারাম কলেজসহ নারায়ণগঞ্জের আরও চারটি কলেজের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
সকাল দশটায় শুরু হওয়া এ উদ্যোক্তা সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ইসলামী ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক শহীদুল ইসলাম। এছাড়া, মোহাম্মদ হাতেমসহ আরও কয়েকজন ব্যবসায়ী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন।
“অতিথি সকলেই তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। আমরা অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে ছিলাম। এ সময় ছাত্রদল নেতাদের নেতৃত্বে কয়েকজন শিক্ষার্থী অনুষ্ঠানস্থলে ঢুকে হাতেম সাহেবকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। ‘হাতেম দালাল’ এইসব কথা বলতে থাকেন। পরে অনুষ্ঠানস্থল ছেড়ে চলে যান মোহাম্মদ হাতেম”, যোগ করেন সাঈদ।
যোগাযোগ করা হলে মুঠোফোনে বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের তোলারাম কলেজ শাখার সভাপতি মনির হোসেন জিয়া বলেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন মোহাম্মদ হাতেম ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারকে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার কথা প্রকাশ্যে বলেছিলেন। সরকারি তোলারাম কলেজের চারজন শিক্ষার্থী আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন। হাতেম সেই শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করে ফ্যাসিস্টের পক্ষ নিয়েছিলেন। খুনির পক্ষে থাকা তার মতো ব্যক্তি কলেজে কোনো অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেন না। এটা শহীদ ও শহীদ পরিবারের সঙ্গে অন্যায়। আমরা কলেজের শিক্ষার্থীরা তাই প্রতিবাদ করেছি।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, “আমার মাধ্যমে কোনো স্বার্থ হাসিলে ব্যর্থ হওয়া কোনো মহলের প্ররোচনায় ছাত্ররা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। যারা হেনস্থা করার চেষ্টা করেছে তারা আমার সম্পর্কে জানে না, জানলে এমনটা করতো না।”
কখনো কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকার কথা উল্লেখ করে এ ব্যবসায়ী নেতা বলেন, “আমার কাজ সরকারের সঙ্গে মিলেমিলে ব্যবসায়ীদের স্বার্থে পলিসি নির্মাণ করা। কিন্তু বিগত সরকার আমাকে বিএনপি-জামায়াতপন্থী বানিয়েছে, এখন আমাকে আওয়ামী লীগের দোসর বলা হচ্ছে। অথচ আওয়ামী লীগের দোসর হতে পারিনি ওই সরকারের আমলে সভাপতি হতে পারিনি। কেননা ২০১০ সালেই আমার সভাপতি হওয়ার কথা ছিল। আমি সভাপতি হয়েছি ওই সরকারের পতনের পর।”
এর আগে গত ৪ নভেম্বর শিক্ষার মানোন্নয়ন নিয়ে শিল্পকলা একাডেমীতে জেলা প্রশাসনের এক অনুষ্ঠানেও তোপের মুখে পড়েন মোহাম্মদ হাতেম। ওইদিন হাতেমকে ‘গণঅভ্যুত্থানের শত্রু’ উল্লেখ করে বক্তব্য রাখেন জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল আমিন। তাকে অনুষ্ঠানে অতিথি করা নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করেন এনসিপির এই নেতা।
ওই অনুষ্ঠানে আল আমিন বলেন, “এখানে মঞ্চে ছাত্রদের নানা পরামর্শ দিতে দেখলাম এমন একজন ব্যক্তিকে যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় শেখ হাসিনার সভায় কীভাবে ছাত্রদের আন্দোলন দমন করতে হবে সেই অনুরোধ করেছিলেন। গণঅভ্যুত্থানের শত্রু এই ধরনের ব্যক্তি যারা ওসমান পরিবারের দালালি করেছেন তাদেরকে কেবল একটা পদের কারণে স্পেস দিতে পারি না।”
এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শোয়াইব আহমাদ খান।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৩ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন গণভবনে ব্যবসায়ী নেতাদের নিয়ে শেখ হাসিনার এক সভায় মোহাম্মদ হাতেম ছাত্র আন্দোলনকে ‘তান্ডব’ হিসেবে উল্লেখ করে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান। তিনি বিগত সরকারের পাশে আছেন এবং সবসময় থাকবেন বলেও উল্লেখ করেন।
দুইদিন পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে হাতেমের দেওয়া এই বক্তব্যের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। যদিও চলতি মে মাসে বিকেএমইএ’র নির্বাচনে সভাপতি নির্বাচিত হন এ ব্যবসায়ী নেতা।